ইতিহাস মাঝে মধ্যে আমাদের যেমন অসাধারন সব তথ্য উপহার দেয়, তেমনি ইতিহাসে এমনও কিছু ঘটনা আছে যা, আমাদের হতবাক করে দেয়। ৮ থেকে ১০ বছরের বয়সে যেখানে আমরা খেলাধুলা করে বেড়াই সেখানে এই অল্প বয়সেই, সিরিয়াল কিলারের তকমা পেয়েছিল ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যের ৮ বছরের ছেলে অমরজিত সাডা, যে মোট তিন জনকে হত্যা করেছিল। এবং বর্তমানে সে পৃথিবীর সব থেকে কমবয়সি সিরিয়াল কিলার। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন সে মাত্র ৮ বছর বয়সে একজন সিরিয়াল কিলার হয়ে গিয়েছিল ? পুলিশ কিভাবে তদন্ত করেছিল আর কি এই অমরজিত সাডার ইতিহাস ?
সময়টা ছিল ২০০৬ সাল, ভারতের বিহার রাজ্যের বেগুসারাই জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম মুসেইরিতে ২টি পরিবার পাশাপাশি বসবাস করত, একটি পরিবারে থাকত, অমরজিত, তার বাবা মা, এবং অমরজিতের নিজের একটি ৮ মাসের বোন, সেই সময়ে অমরজিতের বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর, অমরজিতের বাড়ির পাশেই থাকত তার নিজের কাকা, আর সেখানে তার কাকা, কাকি এবং তাদের একটি ৬ বছরের মেয়ে ছিল।
গ্রামটি ছোট হওয়ার কারনে সবাই মোটামুটি সবাইকে চিনত। এই গ্রামে সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু হঠাত অমরজিতের কাকার ৬ বছরের মেয়ে উধাও হয়ে যায়, যেহেতু গ্রামটি ছোট ছিল, তাই এই খবর খুব তারাতাড়ি ছড়িয়ে যায়। তবে সেই সময়ে অমরজিতের কাকা কাকি এই বিষয়ে কোন পুলিশ কেস করেনি। ধিরে ধিরে গ্রামের লোকের ছেলেধরার গল্প বানিয়ে বিশয়টিকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্ত এই ঘটনার মাত্র ৩ মাসের মধ্যে আবার একটি ৮মাসের বাচ্চা মেয়ে উধাও হয়ে যায়। আর এই বাচ্চা মেয়েটি ছিল অমরজিতের নিজের বোন। কিন্তু এবারও কোন রকম পুলিশ কেস করা হয়নি। তবে এবার গ্রামবাসিদের মধ্যে সন্দেহর দানা বাধতে থাকে। তারা এবার আর ছেলেধরার গল্প মানতে পারছিল না।
এই ঘটনার ৩ মাস পর, ওই গ্রামের এক গরিব মহিলা যার নাম ছিল চুনচুন দেবি, তিনি একদিন তার ৬ মাসের ছোট মেয়ে যার নাম ছিল খুসবু তাকে নিয়ে গ্রামের স্কুলে বসে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন, তখন তিনি খুসবুকে ওখানে রেখে কাজের জন্য বাড়িতে যান। কিছুক্ষন পর যখন তিনি ফেরেন। তখন তিনি ওখানে খুসবুকে দেখতে পাননা। এরপর তিনি আশেপাশে খোঁজ করেন। কিন্তু খুসবুর কোন চিহ্নও তিনি পান না। এবার গ্রামের লোকজনও বিশয়টি জেনে যায়। এবং তাদের সহযোগিতায় চুনচুন দেবি, পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তবে পুলিশ প্রথমের দিকে এই বিশয়টিকে অতটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে তদন্তের খাতিরে পুলিশ গ্রামে আসে এবং তখন তারা জানতে পারে যে এর আগেও দুটি বাচ্চা মেয়ে ঠিক একই ভাবে এই গ্রাম থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল, এবার পুলিশ অফিসাররা একটু নড়েচড়ে বসে, এবং তদন্তের জন্য অমরজিতের পরিবার মানে, যেখানে আগের দুট বাচ্চা মেয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল সেখানে কথা বলতে যায়।
তারা যখন বাড়ির লোকজনকে প্রশ্ন করে, তখন বাড়ির লোকজন জানায় যদি কেউ কিছু এই বিষয়ে বলতে পারে তাহলে সেটা একমাত্র অমরজিতই বলতে পারবে। পুলিশ অফিসাররা ঘাবড়ে যায়। এই ৮ বছরের বাচ্চা ছেলেটি কিভাবে তাদের তদন্তে সাহায্য করতে পারবে। পুলিশ যখন অমরজিতের কাছ থেকে এই বিষয়ে জানতে চায়, তখন হাসছিল। কয়েকবার জিজ্ঞাসা করার পর, সে বলে, যদি আমাকে বিস্কুট কিনে দাও, তাহলে আমি বলব, এরপর তাকে বিস্কুট কিনে দেওয়া হয়, বিস্কুট খেতে খেতে অমরজিত জানায়, খুসবু স্কুলের ওখানে শুয়ে শুয়ে কাদছিল, তাই আমি ওকে ইট দিয়ে মেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। এই কথা শুনে পুলিশ সহ ওখানে থাকা সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। এবার পুলিশ তার কাছে জানতে চায় তুমি ওকে কোথায় ঘুম পাড়িয়েছ, তখন অমরজিত তাদের স্কুলের পাশেই একটি ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়, আর একটি গর্ত দেখিয়ে বলে, যে ওখানে খুশবুকে ওখানে রেখেছে, পুলিশ সাথে সাথে সেই গর্তের কাছে গিয়ে দেখে, চুনচুন দেবির ৬ মাসের মেয়ে খুশবু মারা গেছে।
এবার তারা অমরজিতকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসে, তারা ভেবেছিল যেভাবে সে খুসবুকে হত্যা করেছিল, হতে পারে সে, এর আগে উধাও হয়ে যাওয়া বাচ্চা দুটর বিশয়েও কিছু জানে।
তবে তারা যখন ৮ বছরের অমরজিতের কাছে এই বিষয়ে জানতে চায় তখন সে আবার বিস্কুট খেতে চায়, তাকে আবার বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়, আর এবার সে স্বীকার করে নেয় যে, এর আগে উধাও হয়ে যাওয়া দুট বাচ্চা মেয়ে, যার মধ্যে একজন তার নিজের ৮ মাসের বোন, এবং আরেকজন তার কাকার মেয়ে, যার বয়স ছিল ৬ বছর তাদের দুজনকেও সে ইট দিয়ে মেরে ফেলেছিল। পুলিশ অফিসাররা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। কারন তাদের সামনে এই মুহূর্তে ছিল একজন ৮ বছর বয়সের সিরিয়াল কিলার। যে মোট তিনজনকে হত্যা করেছিল।
তবে এখনও তারা এটা বুঝতে পারছিল না, কেন অমরজিত এই খুন গুল করেছিল ? জিজ্ঞাসা করতে অমরজিত জানায়, সে যখন কাউকে কস্টে দেখে তার খুব ভালো লাগে, সে যখন ওই তিন জনকে খুন করেছিল তখন তারা খুব কস্ট পেয়েছিল। পুলিস অফিসাররা বুঝে যান, অমরজিত একজন মানসিক রোগী
এরপর অমরজিতের পরিবারের লোকজনদের জেরা করা হয়। জেরায় তারা জানায়, যে অমরজিত যে এর আগে তার কাকার মেয়েকে খুন করেছিল তখন সেটা তারা বুঝতে পেরেছিল, কিন্ত নিজেদের পারিবারিক বিশয় ভেবে এই ব্যাপারে পুলিশে তারা জানায়নি, এরপর সে যখন নিজের বোনকে হত্যা করে তখন তারা অমরজিতকে খুব মারধর করে, তখন অমরজিত বলে সে এই কাজ আর কখনও করবে না, তাই সেবারও তারা পুলিশকে কিছু জানায়নি।
এরপর অমরজিতকে জুভেনাল কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়, কারন তার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর, তাই ভারতের আইন অনুজায়ি তাকে শাস্তি দেওয়া যেত না। জুভেনাল কোর্ট অমরজিতকে ৩ বছর সরকারি হোমে নজরদারিতে থাকার জন্য বলে। তবে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা অমরজিতের মানসিক রোগ নিয়ে বেশ কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করেন। এবং তারা কোর্টের কাছে আর্জি করেন জতদিন না অমরজিত একজন সাবালক হচ্ছে মানে তার ১৮ বছর হচ্ছে ততদিন তাকে সরকারি হোমে রাখার অনুমতি দিতে। আর তারপর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত অমরজিত সরকারি হোমেই ছিল। বর্তমানে তার বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি, সে আজ একটি নতুন নামে নতুন পরিচয়ে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে এসেছে।
ভিডিও দেখুন