পৃথিবীর ইতিহাসে যত সুন্দরি নারী জন্মগ্রহন করেছেন তাদের মধ্যে ক্লিওপেট্রাকে বলা হয় সব থেকে সুন্দরি। কেউ যদি তাকে একবার দেখতেন তবে তার সৌন্দর্যের কোথা সারাজীবনেও ভুলতে পারত না সেই ব্যক্তি। আর এই সৌন্দর্য কেই হাতিয়ার করে একসময় তিনি হয়ে উঠেছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালি নারী।  যার হাতে ছিল মিশরের মত প্রাচীন সাম্রাজ্যের ক্ষমতা, তার রুপের সামনে ঝুকে যেত বীর যোদ্ধারা, আর যদি বলা হয় বিউটি উইথ ব্রেন, তাহলে ক্লিওপেট্রার নাম সবার উপরে আসবে, কারন সৌন্দর্যের পাশাপাশি তিনি বেশ বুদ্ধিমতি ছিলেন। এবং সেকালে খুবই স্বাধীনচেতা মানসিকতা নিয়ে চলতেন। যেমন নিজের ইচ্ছে মত পুরুষ নির্ধারণ করতেন তেমনি দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুব সহজেই  করতেন।  তবে  তার শেষ পরিনতি খুবই করুন ছিল আর তার হাত ধরেই প্রাচীন মিশরের সাম্রাজ্যের সমাপ্তি হয়, চলুন আজকের প্রতিবেদনে মিশরের রানি সৌন্দর্যের প্রতিক সেই ক্লিওপেট্রার ইতিহাস আপনাদের জানাই, সাথে এটাও জেনে নেই কি হয়েছিল এই অপরূপ সুন্দরি রানির শেষ পরিনতি।।

ক্লিওপেট্রার অরিজিনাল স্কালপচার ( Source - Wikipedia )
ক্লিওপেট্রার অরিজিনাল স্কালপচার ( Source – Wikipedia )

আলেকজান্ডার যখন পৃথিবী জয়ের উদ্যেশ্যে বের হন তখন ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বে তিনি মিশর জয় করেন। এরপর তিনি বহু দখল করেছিলেন কিন্তু ৩২৩ সালে খুবই অল্প বয়সে তিনি মারা যান, আলেকজান্ডারের ইতিহাস নিয়ে আমাদের একটি ভিডিও আছে তার লিঙ্ক ডেসক্রিপশন বস্কে ও কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে, আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার বিশাল সাম্রাজ্য তার ৪জন সেনাপতির মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন টলেমি,যিনি মিশরের সাম্রাজ্য ভাগে পেয়েছিলেন। এনাকে প্রথম টলেমি বলা হয়। এরপর প্রায় ২ শো বছর পার হয়ে যায়, তখন মিশরের রাজা অর্থাৎ ফ্যারাও ছিল দ্বাদশ অর্থাৎ বারোতম টলেমি আর স্ত্রী অর্থাৎ রানির নাম ছিল পঞ্চম ক্লিওপেট্রা, তবে আমরা এই ভিডিওতে যেঁ ক্লিওপেট্রার কথা বলব তিনি ছিলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা।

ক্লিওপেট্রা ( Source - Twitter/Aungshita1 )
ক্লিওপেট্রা ( Source – Twitter/Aungshita1 )

প্রাচীন মিশরে সেসময়ে নিয়ম ছিল রাজ পরিবারের সদস্যরা নিজের আপন ভাই বোনের সাথে বিয়ে করার। তেমনি এই বারোতম টলেমি এবং পঞ্চম টলেমি দুজনেই ছিলেন আপন ভাইবোন যারা বিবাহ করে রাজা ও রানি হয়ে হয়েছিলেন। এদের কন্যা সন্তান ছিলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা, যার ইতিহাস আপনাদের জানাব।  সুন্দরি ক্লিওপেট্রা ৬৯ খ্রিস্টপূর্বে জন্মগ্রহন করেন। ক্লিওপেট্রা শব্দের অর্থ ছিল গ্লরি অফ দ্য ফাদার, যার বাংলা অর্থ দাড়ায় বাবার গৌরব। সত্যিই গৌরব করার মতই ছিলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা।  যেমন ছিল তার সৌন্দর্য তেমনি ছিলেন বুদ্ধি মতি। পড়াশোনা থেকে শুরু করে রাজনীতি অস্ত্রবিদ্যা সবেতেই তিনি পারদর্শী ছিলেন। তিনি এই টলেমি বংশের প্রথম নারী ছিলেন যেঁ প্রাচীন মিশরের ভাষা লিখতে ও পড়তে পারত,এছারাও আরবি, রোমান সিরিয়ান হিব্রু ইথপিয়ান ভাষাও শিখেছিলেন।  তিনি সেসময়ে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন, রোমান ও মিশরীয় পোশাকের মিশ্রন করে নতুন নতুন ধরনের পোশাকের ধারনা দিতেন এবং সেগুল তার কর্মচারীরা তৈরি করত। আর সব সময় তিনি একজন মিশরীয় দেবির মত সাজতেন।  নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের মেকাপের ব্যবহার শুরু করেন, আর সেই সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি একটি বইও লিখেছিলেন। সেখানে সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ছোটখাট রোগের চিকিৎসার কথাও উল্লেখ করা আছে। এছারা তার মহলে স্নান ও স্পার জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ ছিল, বলা হয় নিজের সৌন্দর্য ও যৌবন ধরে রাখতে তিনি প্রতিদিন গাধার দুধ দিয়ে স্নান করতেন, বর্তমানে এক লিটার গাধার দুধ ভারতে ৩ হাজার টাকা। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন তিনি তার সৌন্দর্যের জন্য কত টাকা খরচ করতেন।  এছারাও তার নিজের একটি পারফিউম ফ্যাক্ট্রি ছিল, যেখানে তৈরি সব আলাদা আলাদা ধরনের পারফিউম রেসিপি তার মুখস্ত ছিল।

ক্লিওপেট্রা ( Source - thoughtco )
ক্লিওপেট্রা ( Source – thoughtco )

ক্লিওপেট্রার যখন ১৪ বছর বয়স ছিল তখন তার মা পঞ্চম ক্লিওপেট্রা মারা যান, এই সময়ে তার বাবা দ্বাদশ টলেমি যিনি মিশরের রাজা ছিলেন তার শাসন কাজে সহায়তা করেন। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি তার বাবার সহযোগিতা করেন শাসন কাজে। এই চার বছরে তিনি রাজ্য চালানর সমস্ত দক্ষতা অর্জন করেন সাথে সেসময়ে মিশরে হওয়া দুর্ভিক্ষ ও জলেও সমস্যা দূর করে মিশরীয়দের মন জয় করে নিয়েছিলেন। ক্লিওপেট্রা খুবই উচ্চাকাঙ্খি ছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন একসময় মিশরের স্বাধীন শাসক হবেন। তবে তার সামনে অনেক বাধা ছিল। যখন তার ১৮ বছর বয়স ছিল তখন তার বাবা দ্বাদশ টলেমি যুদ্ধে মারা যান এরপর মিশরের নিয়ম অনুযায়ী ক্লিওপেট্রা তার আপন ভাই ত্রয়োদশ অর্থাৎ তেরতম টলেমির সাথে বিবাহ করেন। এরপর ক্লিওপেট্রা ও তার হাজবেন্ড ত্রয়োদশ টলেমি মিশরের শাসন চালান। কিন্তু এর আগেই আপানাদের জানিয়েছি ক্লিওপেট্রা ছিল খুব উচ্চাকাঙ্খি তিনি তার জায়গা অন্য কারোর সাথে ভাগ করে নিতে অস্বীকার করতেন। এই কারনে তিনি তার ভাই তথা হাজবেন্ড ত্রয়োদশ টলেমীকে সিঙ্ঘাসন থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেন এবং তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। তবে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি  ত্রয়োদশ টলেমির কাছে ফাঁস হয়ে যায়।  তখন টলেমি তার ছোটবেলার শিক্ষক পাথেনিউয়াসের সাহায্য চান, পাথেনিউয়াস তার শিক্ষকের পাশাপাশি টলেমির একজন উপদেষ্টা ছিলেন যেঁ রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যায় টলেমিকে সাহাজ্য করত। ক্লিওপেট্রা যখন বুঝতে পারে ষড়যন্ত্র করে টলেমির হত্যা সম্ভব নয় তখন সে গৃহ যুদ্ধ শুরু করে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ক্লিওপেট্রা বুঝে যান এই যুদ্ধে সে জিততে পারবে না কারন সৈন্যবল টলেমীর বেশি ছিল তাছারা পথেহেনিউয়াসের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি টলেমী কে আরও শক্তিশালি করে তুলেছিল। তখন উপায় না পেয়ে ক্লিওপেট্রা সিরিয়াতে পালিয়ে যান।  মিশর ছেরে পালিয়ে গেলেও তিনি মিশর জয়ের আশা কখনও হারাননি। সৈন্য জগার করতে থাকেন।

মিশর ছেড়ে রোমে পালিয়ে যান ক্লিওপেট্রা (Source - Time Travel Rome )
মিশর ছেড়ে রোমে পালিয়ে যান ক্লিওপেট্রা (Source – Time Travel Rome )

 

তখন সময় ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৮ সাল; তখন রোমান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন জুলিয়াস সিজার, আর সেসময়ে রোমান সাম্রাজ্য গৃহযুদ্ধ চলছিল রাজা জুলিয়াস সিজার এবং বিদ্রোহী সেনাপতি পম্পেইয়ের সাথে। বিদ্রোহী সেনাপতি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায় তৎকালীন মিশরের রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়ায়। মিশরের শাসক হিসেবে তখন সিংহাসনে ছিলেন ক্লিওপেট্রার ভাই তথা স্বামি ত্রয়োদশ টলেমি। টলেমীর হুকুমেই ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয় পরাজিত সৈনিক পম্পেইকে।

এর কিছুদিন পরেই জুলিয়াস সিজার তার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওনা হন মিশর দখলের জন্য। মিশরের সম্রাট টলেমি সিজারকে বাধা দিলেও জিততে পারলেন না। ওদিকে ক্লিওপেট্রা পুরো ঘটনার ওপর নজর রাখছিলেন। তিনি যখন দেখলেন, রাজা জুলিয়াস সিজার মিশর দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তিনি বুঝতে পারলেন, এটি তার জন্য বিশাল একটি সুযোগ। ক্লিওপেট্রা বুঝে গিয়েছিলেন, জুলিয়াস সিজারের দরকার মিশরের ধন-সম্পদ, আর তার দরকার ছিল মিশরের সিংহাসনের ক্ষমতা।

ক্লিওপেট্রা এবং জুলিয়াস সিজার ( Source - Thoughtco )
ক্লিওপেট্রা এবং জুলিয়াস সিজার ( Source – Thoughtco )

তাছাড়া জুলিয়াস সিজার ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যর একমাত্র সম্রাট।  ক্লিওপেট্রা যদি তাকে পাশে রাখতে পারেন, তাহলে তার সৈন্য বাহিনীর সাহায্যে সহজেই ভবিষ্যতে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন। ওদিকে রানী ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্য এবং বুদ্ধিমত্তায় জুলিয়াস সিজার তার প্রেমে পড়ে যান এবং তাকে পূর্ণ সমর্থন দেন যাতে ক্লিওপেট্রা মিশরের ক্ষমতা তার হাতে নিতে পারে। সিজার যুদ্ধে জিতে যান এবং কথামত তিনি ক্লিওপেট্রার হাতে মিশরের ক্ষমতা তুলে দেন। জুলিয়াস সিজার কখনই রানিকে বিবাহের প্রস্তাব দেননি। তবে তাদের মধ্যে গোপনে প্রেম ছিল। ওদিকে প্রাচীন মিশরের নিয়মনিতির উপর শ্রদ্ধা রেখে ক্লিওপেট্রা তার আরেক ভাই যার নাম ছিল চতুর্দশ অর্থাৎ চোদ্দতম টলেমি তাকে বিয়ে করেন। তবে ক্লিওপেট্রা ধিরে ধিরে চতুর্দশ টলেমীকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন, এমনকি তাদের বৈবাহিক জীবনও তেমন সুখের ছিল না। বলা হয় ক্লিওপেট্রা নিজের সব ভাই বোনকে একে একেহত্যা করেছিলেন এমনকি তার আর মিশরের সিংহাসনের ভিতর যেই এসেছে তিনি তারই হত্যা করেছেন ছলে বলে কউশলে।  জুলিয়াস সিজারই তখন তার প্রেমিক ছিল।আর এই সময়ে জুলিয়াস সিজার রোম ছেরে বহুদিন মিশরেই ছিলেন। সেই সময়ে ক্লিওপেট্রা তার প্রেমিক জুলিয়াস সিজারের এক ছেলের জন্ম দেন, যদিও জুলিয়াস সিজার প্রকাশ্যে কখনোই তাকে ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজারের আমন্ত্রণে ক্লিওপেট্রা তার ছেলে ও স্বামী চতুর্দশ টলেমিকে সাথে নিয়ে রোম ভ্রমণে যান। এ সময় ক্লিওপেট্রার প্রতি সিজারের ভালোবাসা রোমান রাজনীতিকদের পছন্দ হয়নি। তারা সিজারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ সালে রোমে থাকা কালীন সিজারকে হত্যা করা হয়। এই হত্যায় ক্লিওপেট্রা চিন্তিত হয়ে পড়েন, কারণ সিজারের সৈন্যবাহিনির দমেই এত দিন তিনি নিজের ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। তাছাড়া তার এবং জুলিয়াস সিজারের যেঁ ছেলে হয়েছিল সেই জুনিয়র সিজার ভবিষ্যতে রোমের রাজা হবে, এমন স্বপ্নই দেখতেন রানী।

জুলিয়াস সিজারের হত্যা ( Source - Wikipedia )
জুলিয়াস সিজারের হত্যা ( Source – Wikipedia )

জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পরও থেমে থাকেনি রানী ক্লিওপেট্রার ক্ষমতার মোহ। সৌন্দর্য দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টায় আর মিশরের সিংহাসনে নিজের আসন পাকাপোক্ত করার জন্য তিনি এবার কাজে লাগাতে চাইলেন আরেক রোমান শাসক অ্যান্টনিকে। অ্যান্টনি ছিলেন রাজা জুলিয়াস সিজারের পরবর্তী রোমান শাসক। জুলিয়াসের মৃত্যুর পর রোমান সাম্রাজ্য তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যেহেতু রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা চলে যায় তিনজন শক্তিশালী ব্যক্তির হাতে, যারা প্রত্যেকেই জুলিয়াস সিজারের জায়গা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন। এই তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন অক্টোভিয়ান, যিনি ছিলেন সিজারের ভাইয়ের ছেলে, আরেকজন ছিলেন মার্ক অ্যান্টনি এবং মার্কাস লেপিডাস।

মার্ক অ্যান্টনি ( Source - Interesting literature )
মার্ক অ্যান্টনি ( Source – Interesting literature )

যদিও মার্ক অ্যান্টনির ক্ষমতার মধ্যেই ছিলেন মিশরে, তবুও মিশর শাসনের জন্য ক্লিওপেট্রার সম্মতি দরকার ছিল তার। অ্যান্টনির ধারণা ছিল, যদি তিনি জোর করে মিশর দখল করতে চান, তাহলে ক্লিওপেট্রা হয়তো তার শত্রুদের সাহায্য করতে পারে। অপরদিকে মিশরের ধন-সম্পদ দরকার ছিল, তাই তিনি ক্লিওপেট্রার সাথে সমঝোতায় আসার একটি উপায় খুঁজছিলেন। অ্যান্টনির পক্ষ থেকে রাজদূত ক্লিওপেট্রার জন্য চিঠি নিয়ে গেলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। কারণ তিনি ভালো করেই জানতেন, অ্যান্টনি তখন উদ্গ্রিব হয়ে আছেন তার সাথে দেখা করার জন্য। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন নিজের কিছু শর্ত মানিয়ে নেওয়ার।

ক্লিওপেট্রার প্রয়োজন ছিল আরেকজন রোমান শাসকের, যে তাকে সাহায্য করবে তার শত্রুদের ঘায়েল করতে। এত কিছুর পরেও যখন ক্লিওপেট্রা কোনো উত্তর দিলেন না, মার্ক অ্যান্টনি তখন আদেশ করলেন, ক্লিওপেট্রাকে তার প্রাসাদে দেখা করার জন্য। ক্লিওপেট্রা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তিনিও আদেশ দিলেন সফরের জন্য নৌকা প্রস্তুতের।

ক্লিওপেট্রার সেই নৌকা, যাতে করে তিনি অ্যান্টনির কাছে গিয়েছিলেন ( Source - National Geographic )
ক্লিওপেট্রার সেই নৌকা, যাতে করে তিনি অ্যান্টনির কাছে গিয়েছিলেন ( Source – National Geographic )

বিশেষ সেই নৌকা সাজিয়ে তোলা হয়। অনেক লেখক তাদের লেখায় দাবি করেন নৌকাটি যেন কোনো ভাসমান প্রাসাদ ছিল। স্বর্ণনির্মিত, মুক্তাখচিত নৌকায় সিডনাস নদী পাড়ি দিয়ে রোমে যাচ্ছিলেন ক্লিওপেট্রা। নৌকার পালগুলো ছিল মূল্যবান সিল্কে বোনা। নৌকা যখন বাওয়া হচ্ছিল, তখন সুমধুর শব্দে চারদিক ভরে যাচ্ছিল। আর ক্লিওপেট্রা নিজে পরেছিলেন গ্রীকদের প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির মতো মোহনীয় পোশাক,  রাজা অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রাকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং দূত মারফত অ্যান্টনিকে তার ভাসমান রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানায়। ক্লিওপেট্রা চাইছিলেন সাক্ষাতের সময়টা যথাসম্ভব মোহময় করে তুলতে।তিনি অ্যান্টনির মনে যত বেশি প্রভাব ফেলতে পারবেন ততই সহজে তার শর্ত মানিয়ে নিতে পারবেন।

রাজা অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যের কথা আগেই লোকমুখে শুনেছিলেন। কিন্তু তিনি যখন তার সামনে এসে দাঁড়ালেন, মনে হলো যেন খোদ প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি তার সামনে দাড়িয়ে। তবে ক্লিওপেট্রার এই কৌশলটিও কাজে লেগেছিল, অ্যান্টনি তার প্রেমে পাগল হয়ে তার সাথে আলেক্সান্দ্রিয়ায় বেশ অনেকটা সময় কাটালেন।

মার্ক অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রা ( Source - Egypttoday)
মার্ক অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রা ( Source – Egypttoday)

এ সময় অ্যান্টনি তার শত্রুদের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছলেন। এদিকে রোমানদের পছন্দ ছিল না ক্লিওপেট্রা এবং রাজা অ্যান্টনির এই সম্পর্ক। তারা অ্যান্টনির শত্রুদের সাথে মিলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। যদিও অ্যান্টনি চাচ্ছিলেন এই যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে, কিন্তু ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইতিহাসখ্যাত সেই অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধ লেগেই যায় রাজা অ্যান্টনি আর রোমান সামাজ্যের অন্যান্য শাসকের মধ্যে।

এই যুদ্ধের মধ্যেই একটি গুজব ছড়ানো হয় যে, ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেছেন। প্রেয়সীর মৃত্যুর খবর শুনে রাজা অ্যান্টনি ভেঙে পড়েন, এবং তলোয়ারের আঘাতে নিজের জীবন শেষ করে দেন। তাছাড়া তখন যুদ্ধের অবস্থাও বেশ খারাপ  ছিল। রাজা অ্যান্টনির পরাজয় ছিল নিশ্চিত। রাজার মৃত্যুর পর যুদ্ধে বিজয়ী হন রোমান সাম্রাজ্যের আরেক শাসক অক্টাভিয়ান।

এরপর ক্ষমতা হাতে পেয়েই অক্টাভিয়ান মিশর দখল করে নেন। এদিকে ক্লিওপেট্রা শোকে পাথর হয়ে ছিলেন, একে তো অ্যান্টনির মৃত্যু, আরেকদিকে পরাজয়ের লজ্জা। তখন তিনি বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন কিন্তু পারেননি, কারণ অক্টাভিয়ানের সৈন্যরা তাকে পাহারায় রেখেছিল।

মৃত্যু শয্যায় ক্লিওপেট্রা ( Source - Science photo library )
মৃত্যু শয্যায় ক্লিওপেট্রা ( Source – Science photo library )

তবে বলা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সাল; বন্দী ক্লিওপেট্রা বিষাক্ত মিশরীয় গোখরা সাপের কামড়ে আত্মহত্যা করেন। অনেকের মতে, ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেননি, বরং খুন হয়েছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতামত ভিন্ন হলেও একসময়ের ক্ষমতাধর রানীর যে করুণ পরিণতি হয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বন্ধুরা ক্লিওপেট্রা যাই করেছিলেন তা তার ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য করেছিলেন, আর মিশরের মানুষও তাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন কারন ক্লিওপেট্রা তাদের সব সমস্যার দিকে গুরুত্ব দিতেন। আজ ২ হাজার বছর পার হয়ে গেলেও তাকে নিয়ে চর্চা একটুও কমেনি। কেমন লাগলো ক্লিওপেট্রার ইতিহাস? আর সে যা যা করেছিল তা কি ঠিক ছিল নাকি ভুল ? আপানার মতামত আমাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানান।।

ক্লিওপেট্রার ইতিহাস নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *