একটি মিশন যা মোট ১৮ বার ক্যান্সেল করা হয়েছিল, যেখানে দু মাস অপেক্ষা করলেই নতুন রকেটে করে মহাকাশে যাওয়া যেত, সেখানে বারবার সমস্যা থাকা সত্ত্বেও পুরনো রকেট টিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল মিশনের জন্য। এমনকি রকেটটি যেদিন লঞ্চ করা হয়েছিল, সেই সময়েই রকেটটির সাথে ঘটেছিল একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা, আর নাসা জানত যে এই রকেটে করে যাওয়া মহাকাশ যাত্রীরা আর কোনদিন পৃথিবীতে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে না। কিন্তু এই সব কিছু জানার পরেও তারা এই ব্যাপারে মহাকাশ যাত্রীদের কিছু জানায়নি। আর তার ফলে যা হয়েছিল, তা গোটা বিশ্ববাসিকে হতবাক করে দিয়েছিল। ৭জন মহাকাশ যাত্রী মহাকাশেই নিজেদের জীবন হারায়। আর আপনারা জানলে অবাক হবেন সঠিক সময়ে যদি একটি রেস্কিউ মিশন করা যেত, তাহলে বাচান যেত ওই সবাইকে। কিন্তু নাসা সেটাও করেনি। এই ৭ জন মহাকাশ যাত্রীর মধ্যেই একজন ছিলেন কল্পনা চাওলা, তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি গিয়েছিলেন মহাকাশে। সামান্য একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার বাবা ছিলেন একজন হকার, সেই মেয়েটি যে একদিন মহাকাশে যেতে পারবে, তা কেউ কোনদিন ভাবতেও পারেনি। কিন্তু নিজের সামনে আসা সব বাধাকে পেরিয়ে তিনি নিজের স্বপ্নকে পুরন করেছিলেন। কল্পনা চাওলা এতটাই দক্ষ একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন যে নাসা তাকে মোট দুবার মহাকাশে পাঠয়েছিল। এবার প্রশ্ন হল, একটি সাধারন পরিবারের মেয়ে হয়ে কল্পনা চাওলা কীভাবে একজন অয়াস্ট্রনট হয়ে উঠলেন ? আর কল্পনা চাওলার জীবনের শেষ মিশনটিতে কি এমন হয়েছিল, যে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটল, এটা কি নাসার কোন ষড়যন্ত্র ছিল ?
কল্পনা চাওলার ছোটবেলাঃ- ১৭ই মার্চ ১৯৬২ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে কল্পনার জন্ম হয়, তার বাবার নাম বানারসি লাল চাওলা, তিনি পেশায় একজন হকার ছিলেন, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি কল্পনার গভীর আগ্রহ ছিল আর তেমনি তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, নিজের চার ভাইবনের মধ্যে তিনি সব থেকে ছোট ছিলেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় টেগর বাল নিকেতন স্কুলে।
এরপর ১৯৭৬ সালে কল্পনা চাওলা পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে অ্যারনিউটিক্যাল ইঞ্জিয়ারিং কমপ্লিট করেন। সে সময়ে তিনি একমাত্র মহিলা ছিলেন যিনি অ্যারনিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেছিলেন। তবে কল্পনার স্বপ্ন ছিল আরও বড় হওয়ার, তিনি ১৯৮২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকার টেক্সাসসে চলে যান, সেখানে ১৯৮৪ সালে তিনি অয়ারস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিঙয়ের উপরে মাস্টারস করেন। এই সময়ে তার পরিচয় হয় জিন পিয়েরে হ্যারিসনের সাথে, যার সাথে কল্পনা বিয়ে করেছিলেন।
তবে এরপরেও তিনি নিজের পড়াশোনাকে বন্ধ করেননি। ১৯৮৮ সালে তিনি অ্যারস্পেস ইঞ্জিয়ারিং নিয়ে পিএইডি করেন।
ছোটবেলা থেকেই কল্পনার মনে মহাকাশ নিয়ে নানা ধরনের কৌতূহল ছিল। তিনি ছোটথেকেই স্বপ্ন দেখতেন একজন অ্যাস্ট্রনট হওয়ার। আর পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পর তিনি আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাথে কাজ করা শুরু করেন।
এই সময়েই ১৯৯১ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব পেয়ে যান।
নাসার সাথে কাজ করার সময়ে তিনি ১৯৯৫ সালে নাসা মহাকাশে অ্যাস্ট্রনট পাঠানর প্রগ্রামের সাথে যুক্ত হন, আর তিনি সেই মিশনে সিলেক্ট হয়ে যান। এরপর টানা ২ বছর ধরে কল্পনার ট্রেনিং চলে। এরপর ১৯৯৭ সালে নাসা একটি মিশনের জন্য কল্পনা চাওলাকে বেছে নেওয়া হয়। এটি ছিল কল্পনা চাওলার প্রথম স্পেস মিশন। এই মিশনে মোট ৬ জন ক্রু মেম্বার ছিল। ১৯শে নভেম্বর ১৯৯৭ সালে এই কলম্বিয়া স্পেস শাটলে করে কল্পনা তার জীবনের প্রথম মিশনের যাত্রা শুরু করেন। এখানে কল্পনার দায়িত্ব ছিল রবোটিক আরম অপারেট করা। এই মিশনটির নাম ছিল STS 87, এই মিশনে তারা মহাকাশে মোট ১৫ দিন ১৬ ঘন্টা ছিলেন। মিশন শেষ করে কলম্বিয়া স্পেস শাটলে করে তারা ৫ই ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ফিরে আসেন।
এখানে আপনাদের জানিয়ে দেই এই স্পেস শাটল আসলে কি ? কারন এই প্রতিবেদনটি বুঝতে গেলে স্পেস শাটলের বিষয়ে আপনাদের কিছু ধারনা থাকা জরুরী।
দেখুন মহাকাশে কোন মানুষ পাঠানর জন্য দুট জিনিস সব থেকে বেশি দরকার হয়, একটা হল রকেট, যার ভিতরে জ্বালানি থাকে, এই রকেটই আমাদেরকে মহাকাশে নিয়ে যায়, এখানে আরেকটি জিনিসেরও দরকার হয়, সেটা হল একটা সুরক্ষিত চেম্বার, যেখানে মহাকাশ যাত্রীরা থাকে, আর অ্যাস্ট্রনটরা যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন এই সুরক্ষিত চেম্বারটি অনেক বড় ভুমিকা পালন করে, আর সুরক্ষিত ভাবে মানুষদের পৃথিবীতে ফেরত নিয়ে আসে। তবে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত নাসা বা অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, মহাকাশে কোন মানুষ পাঠানর জন্য স্পেস ক্যাপসুল ব্যবহার করত,
তবে এই স্পেস ক্যাপসুল গুলো একবারের বেশি ব্যবহার করা যেত না, ফলে প্রত্যেক মিশনের জন্য অনেক টাকা বাড়তি খরচ হত, এছাড়া এই স্পেস ক্যাপসুল গুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আসার পর প্লেন বা হেলিকপ্টারের মত উড়তে পারত না, তাই এগুল সরাসরি সমুদ্রে এসে পড়ত, ফলে সেখান থেকে মহাকাশ যাত্রীদের উদ্ধার করাও একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। এই সমস্যাকে দূর করার জন্য নাসা জেট প্লেনের মত দেখতে একটি মহাকাশ যান বানায়, যাকে বলা হয় স্পেস শাটল, এই শাটল গুলো একবারের বেশি ব্যবহার করা যায়, এই স্পেস শাটলটিকে রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়, আর সেখানে এটি রকেট থেকে আলাদা হয়ে যায়। নাসা ১৯৮১ সালে কলম্বিয়া স্পেস শাটল প্রথমবার ব্যবহার করে মহাকাশ যাত্রার জন্য, আর এই একটি স্পেস শাটল দিয়ে তারা মোট ২৮টি স্পেস মিশন করেছিল, এবং তাদের পৃথিবীতে ফেরত এনেছিল, আর এটিকে দেখতে একটি জেট প্লেনের মত, ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এটি প্রবেশ করার পর একটি প্লেনের মত এটি মাটিতে ল্যান্ড করতে পারে। এই কারনে বর্তমানে স্পেস ক্যাপসুলের বদলে স্পেস শাটল ব্যবহার করা হয়।
কল্পনা চাওলার শেষ মিশনঃ-
কল্পনা চাওলার প্রথম মহাকাশ অভিজানের সফলতা দেখে নাসা তাকে দ্বিতীয় আরেকটি মিশনের জন্য বেছে নেয়, এই মিশনের নাম ছিল STS-107, শুরুর দিকে ঠিক হয়েছিল এই মিশনটি ২০০১ সালে লঞ্চ করা হবে, আর এবারও তারা কলম্বিয়া স্পেস শাটলে করে মহাকাশে যাবে, ১৯৮১ সালে কলম্বিয়া স্পেস শাটলটিকে প্রথম বার নাসা মহাকাশে পাঠায়, আর ১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই ১৬ বছরে কলম্বিয়া স্পেস শাটলটি মোট ২৭ বার মহাকাশে গিয়েছিল এবং পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল। এত গুলো মিশন করার ফলে এই স্পেস শাটলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। একটি সমস্যা ঠিক করতেই আরেকটি সমস্যা সামনে আসতে থাকে, তাই মিশনের তারিখ ২০০১ সাল থেকে অনেক বার পিছয়ে যায়। অবশেসে এই ভাবে মোট ১৮ বার এই মিশনটির তারিখ পাল্টান হয়েছিল। আর শেষ পর্যন্ত নাসা তরিঘরি করে একটা ডেট ফাইনাল করে ফেলে, এবং ১৬ই জানুয়ারি ২০০৩ সালে এই মিশনটির ডেট ঠিক করা হয়।
এই মিশনটির নাম ছিল STS 107, মিশনের কল্পনা চাওলা সহ মোট ৭ জন ক্রু মেম্বার ছিলেন। ১৬ই জানুয়ারি ২০০৩ সালে এই মহাকাশ যানটিকে লঞ্চ করা হয়, এটি স্পেস শাটল কলম্বিয়ার ২৮ তম মিশন ছিল। লঞ্চ করার পর এটি মহাকাশে ১৫দিন ২২ঘন্টা ২০ মিনিট ছিল, এই সময়ের মধ্যে মহাকাশ যাত্রীরা মহাকাশে নানা ধরনের পরিক্ষা নিরিক্ষা এবং গবেষণা চালায়, অবশেষে ১লা ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে এই মহাকাশযানটি পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করে, প্রথমের দিকে সব কিছু ঠিক ঠাকই ছিল, কিন্তু যখন এই স্পেস শাটলটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ শুরু করে তখন এটির গতি ছিল ঘণ্টায় পেয়ায় ২০ হাজার কিলোমিটার। এই সময়ে মহাকাশ যানের ভিতরে থাকা যাত্রীরা দুর্ঘটনার আভাস পান। বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মহাকাশ যানের ভিতরে গরম হাওয়া প্রবেশ করতে শুরু করে, এর ফলে ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত গতিতে কমতে শুরু করে, বায়ুমন্ডলের গরম হাওয়া ধিরে ধিরে আগুনে রুপ নেয়, আর মহাকাশ যানটির বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে নস্ট করে দেয়, এই সময়ে অক্সিজেনের অভাবে সব মহাকাশ যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে যায়, এদিকে ভিতরে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় নাসার সাথে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মহাকাশ যানের ভিতরে অধিক গরমের কারনে যে মহাকাশ যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে গয়েছিলেন এবার তাদের রক্ত গরম হয়ে ফুটতে শুরু করে, আর এই সময়েই ৭ জন মহাকাশ যাত্রীর মৃত্যু হয়, তবে কিছু সময়ের মধ্যেঈ এই কলম্বিয়া স্পেস শাটলটি আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের ৬৩ কিলো মিটার উপরে ব্লাস্ট করে, আর সব কিছু শেষ হয়ে যায়।
এবার প্রশ্ন হল এই স্পেস শাটলটিতে হঠাত করে আগুন ধরল কীভাবে ?
আমাদের পৃথিবীর চারিদিকে যে বায়ুমণ্ডল আছে, তা এক প্রকার রক্ষা কবচের কাজ করে, মহাকাশ থেকে যদি কোন উল্কা পিন্ড পৃথিবীতে আসে, তাহলে তারা বায়ুমন্ডলে ঘর্ষণের কারনে আগুনে জ্বলে যায়, এই কারনে মহাকাশ থেকে যখনঈ কোন বস্তু পৃথিবীর দিকে আসে তাতে আগুন ধরে যায়, আর এই জিনিসটা স্পেস শাটল বা স্পেস ক্যাপসুলের সাথেও হয়, বিজ্ঞানীরা এই বিশয়টিকে খুব ভালো ভাবে জানে, তাই যাতে মহাকাশযানটি পৃথিবীতে ফেরত আসার সময়ে আগুনে পুরে না যায়, তাই এই স্পেস শাটল বা স্পেস ক্যাপসুল গুলোর চারিদিকে হিট শিল্ড লাগান হয়, এই হিট শিল্ড গুলো ২- ৩ হাজার ডিগ্রি তাপমাত্রা থেকে মহাকাশযানটিকে রক্ষা করতে পারে। যার কারনে এই স্পেস শাটল গুলো সুরক্ষিত ভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে।
এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসবে, আচ্ছা যদি হিট শিল্ড লাগান থাকলে মহাকাশ জানে আগুন ধরে না, বা বায়ুমন্ডলের গরম তাপমাত্রা মহাকাশ যানের ভিতরে আসে না, তাহলে স্পেস শাটল কল্মবিয়াতে কি হিট শিল্ড ছিল না ?
এর উত্তর হল হ্যা, এই স্পেস শাটলটিতে খুবই উন্নত মানের হিট শিল্ড লাগান ছিল। কিন্তু এই হিট শিল্ড খারাপ হয়ে গিয়েছিল, আর সেটাও হয়েছিল মহাকাশ যানটি লঞ্চ করার সময়েই।
Space shuttle Colombia Heat shield failure: – হিট শিল্ড লাগানর পরেও কেন স্পেস শাটলে আগুন লাগল এই প্রশ্নটা নাসার বিজ্ঞানীদের চিন্তায় ফেলে দেয়। এরপর শুরু হয় তদন্ত, সেই সময়ে এই মহাকাশযানটি লঞ্চ করার একটি ভিডিও সামনে আসে, আর তাতেই এই রহস্য ফাস হয়। দেখা যায় মহাকাশযানটি যখন পৃথিবী ছেড়ে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করছিল ঠিক সেই সময়ে একটি ছোট বস্তু এসে স্পেস শাটলের বাদিকের ডানায় আঘাত করে,
নাসা জানায় এই ছোট্ট বস্তটা হল একটি হিট ইনস্যুলেটর ফোম, এটি ওজনে ১ কেজির মত হবে, তবে এটি যখন স্পেস শাটল কলম্বিয়াতে আঘাত করে তখন এটির গতি ছিল ঘন্টায় ৯২০ কিলোমিটার, এত বেশি গতিতে একটি ছোট্ট ঢিলও এই মহাকাশযানটির অনেক বড় ক্ষতি করে দিতে পারত, আর সেখানে তো এটি একটি ১ কেজি ওজনের ফম ছিল।
দেখুন মহাকাশে যখন কোন রকেট পাঠান হয়, তখন ছোট থেকে ছোট সমস্যা গুলোকেও বারবার খতিয়ে দেখা হয়, কারন একদম সামান্য ভুলেও অনেক বড় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।
স্পেস শাটল গুলোকে মহাকাশে পাঠানর জন্য বড় বড় রকেটের সাহায্য নেওয়া হয়, যেগুলোর সাথে স্পেস শাটল যুক্ত থাকে, এই রকেটের ভিতরে যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয় সেগুল হল তরল অক্সিজেন এবং হাইড্রজেন। এবার আমাদের সাধারন তাপমাত্রায় অক্সিজেন বা হাইড্রজেন তো গ্যাসের আকারে থাকে, তাই রকেটের ভিতরে এই হাইড্রজেন এবং অক্সিজেন যাতে তরল অবস্থায় থাকতে পারে এবং বাইরের তাপ ভিতরে যেতে না পারে এই কারনে রকেটের চারিদিকে হিট ইন্সুলেটর ফোম লাগান হয়, এগুল ছোট ছোট ব্লকের বানিয়ে তৈরি করা হত।
স্পেস শাটল কলম্বিয়া যখন মহাকাশে দিকে উড়ে যাচ্ছিল সেই সময়ে রকেটের গায়ে লাগান একটি হিট ইন্সুলেটর ফোমের ব্লক রকেট থেকে খুলে যায়, আর সেটি এসে সজোরে আঘাত করে স্পেস শাটল কলম্বিয়ার বা দিকের ডানায়।
নাসার বিজ্ঞানীরা এই আঘাত লাগার ঘটনাটিকে ক্রিত্তিম উপায়ে পরিক্ষা করেছেন, তারা দেখেন ওই ৯২০ কিলোমিটার প্রতি ঘ্নটার স্পিডে যখন একটি ১ কেজি ওজনের ফোম স্পেস শাটলের ডানায় আঘাত করে তখন স্পেস শাটলের গায়ে যে তাপমাত্রা নিয়ত্রন করার কটিং ছিল, সেখানে ১০ ইঞ্চির একটি গর্ত হয়ে যায়।
এখানে বিজ্ঞানীরা জানায়, এই স্পেস শাটল কলম্বিয়ার বাদিকের ডানায় যে গর্ত হয়ে গিয়েছিল তাতে মহাকাশে যাওয়ার সময় কোন সমস্যা হয়নি, তবে স্পেস শাটলটি যখন পৃথিবীর দিকে ফিরে এসেছিল তখন মহাকাশজান্টির ওই ফাটল দিয়ে বায়ুমন্ডলের গরম হাওয়া মহাকাশ যানের ভিতরে প্রবেশ করছিল, মহাকাশ যানের ভিতরে অক্সিজেনের পরিমান কমিয়ে দেয় আর এই কারনে ভিতরে আগুন ধরে যায়, আর শেষ পর্যন্ত কল্পনা চাওলা সহ বাকি অ্যাস্ট্রনটদের অত্যন্ত মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আশা করি এই দুর্ঘটনার কারনটি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
তবে আপনারা জানলে অবাক হবে, এই দুরঘটনাটির বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা সাথে সাথেই জানতে পেরেছিল, এবং তারা যদি সেই সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিত, তাহলে ওই ৭ জন ক্রু মেম্বারের জীবন বাচান যেত। এবার প্রশ্ন হল কীভাবে ?
প্রথমত তারা যখন পরপর ১৮ বার এই স্পেস শাটলে বিভিন্ন প্রবলেম দেখল, তাও কেন এই মিশনের জন্য এই পুরনো স্পেস শাটল্টিকে টিকে ব্যবহার করল !! দ্বিতীয়ত, নাসার মিশন ম্যানেজমেন্ট টিমের সাইন্টিস্টরা রকেট লঞ্চ করার পরের দিনই ওই ফোম দিয়ে হওয়া দুর্ঘটনাটির বিষয়ে জানতে পেরেছিল, এবং এই বিষয়ে স্পেস মিশন প্রগ্রামের হেড লিন্ডা হ্যামকে এই বিষয়ে সাইন্টিস্টরা জানায়, তবে সেই সময়ে লিন্ডা হ্যাম এই বিশয়টিকে একদম গুরুত্ব দেননি, এমনকি তারা দুর্ঘটনার বিষয়ে মহাকাশে জানে থাকা যাত্রীদেরও কিছু জানায়নি।
এই মিশনটির দুরঘটনার তদন্ত করার জন্য যে টিম তৈরি করা হয়েছিল CAIB তারা জানায়, যে নাসা যদি মিশনটি লঞ্চ করার ৭ দিনের মধ্যেই এই দুরঘটনাটিকে গুরুত্ব দিত তাহলে ওই মহাকাশযাত্রীদের জীবন বাচান যেত।
কারন একমাস পরেই নাসার আরেকটি মিশন লঞ্চ হওয়ার কথা ছিল, যেখানে আটল্টান্টিস নামের স্পেস শাটলটি মহাকাশে যাওয়ার জন্য একদম তৈরি ছিল, নাসা যদি সেই সময়ে ওই স্পেস শাটলটিকে মহাকাশে পাঠিয়ে দিত তাহলে ওই যাত্রীদের স্পেস শাটল কলম্বিয়া থেকে সুরক্ষিত ভাবে পৃথিবীতে ফেরত আনা যেত, আর মহাকাশে বেশি থাকার জন্য স্পেস শাটল কলম্বিয়াতে ৩০ দিনের খাবার মজুত ছিল, এবার প্রশ্ন হল নাসা কি চাইছিলই যে ওই মহাকাশযাত্রীরা যেন পৃথিবীতে ফিরে না আসে !! এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত আমরা কখন পাবো না।
তবে এই ভুলের কারনে জীবন দিতে হয়েছিল ৭জনকে। যারা বেঁচে থাকলে মহাকাশ গবেষণার আরও উন্নতি হত। বন্ধুরা কল্পনা চাওলা ছোটবেলা থেকে মহাকাশে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই মহাকাশেই তিনি চিরতরে হারিয়ে যান। ভারত সরকার কল্পনা চাওলার প্রতি সম্মান জানাতে ইসর মহাকাশে যে আবহাওয়ার স্যাটেলাইট পাঠাবে সেগুলর নাম কল্পনা চাওলার নাম অনুযায়ী রাখা হবে, এছাড়া কল্পনা চাওলার নামে বেশকিছু স্কলারশিপও বের করা হয়, যাতে ছাত্রছাত্রীরা মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে নাসা কল্পনা চাওলার নামে একটি সুপার কম্পিউটার তৈরি করেছে, এবং মঙ্গল গ্রহে কল্পনা চাওলা সহ বাকি ৬জন মহাকাশ যাত্রীর নামে বেশ কিছু পাহাড়ের নাম রেখেছে। আজ কল্পনা আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু তার জীবন আমাদেরকে আজও অনুপ্রানিত করে নিজের স্বপ্নকে পুরন করার জন্য, লাখে নয় কোটিতে একজন হওয়ার স্বপ্নকে পুরন করার। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় এই দুরঘটনাটি কি নাসার কোন ষড়যন্ত্র ছিল ? নাকি এটা ছিল নাসার একটা বড় বোকামি ? আপনার মতামত আমাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানান।