আমাদের জীবনের চলার পথে অনেক বাধার সম্মুখীন হই, অনেকে এই বাধা পেয়ে থেমে যায়, কিন্তু কয়েকজন এমনও থাকেন যারা এই বাধা টাকে পেরিয়ে এগিয়ে যান আর জীবনে সফল হয়ে যান। বন্ধুরা আজ যে মিস্টার বিনকে আমরা চিনি তার জিবনেও অনেক বাধা এসেছিল। মিস্টার বিনের অ্যাক্টিং আমাদের সবাইকে হাসায়, কিন্তু তার জীবনে একটি বড় সমস্যা ছিল তিনি ঠিক ভাবে কথা বলতে পারতেন না, তিনি ছোটবেলায় তোতলা ছিলেন। তাকে নিয়ে সবাই মজা করত। এছাড়াও তার বাবা ছিলেন একজন চাশি। ছোটবেলায় অভাবের মধ্যে কেটেছিল তার জীবন। তিনি ছোটবেলায় কখনও কমেডিয়ান হতে চাননি। কিন্তু এই বাধা পেরিয়ে আজ তিনি একজন সফল ব্যক্তি। এবার প্রশ্ন হল মিস্টার বিন এই যায়গায় কীভাবে এলেন ? কীভাবে তার জীবনের শুরুটা হয়েছিল ? বন্ধুরা আমি মিঠুন রয়েছি আপনাদের সাথে আজকের প্রতিবেদনে রওয়ান আটকিনসন মানে যাকে আমরা মিস্টার বিন নামে জানি তার জীবনের ইতিহাস জানাব।
বন্ধুরা যাকে আমরা সাধারনত মিস্টার বিন নামে জানি তার আসল নাম রওয়ান অ্যাটকিনসন। রওয়ানের জন্ম হয় ৬ই জানুয়ারি ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের কাউন্ট্রি ডরহমে। তার বাবা একজন সাধারন চাশি ছিলেন এবং মা একজন হাউস ওয়াইফ। তার তিন ভাইবনের মধ্যে মিস্টার বিনই ছিল সব থেকে ছোট। তবে ছোট থেকে তার একটি রোগ ছিল, যার ফলে সে ঠিকঠাক করে কথা বলতে পারত না। এি নিয়ে অন্যান্য বাচ্চারা তার সাথে মজা করত। কিন্তু মিস্টার বিন একটু আলাদা ধরনের মানুষ ছিলেন, তিনি এই গুলো শুনে কখনও রাগ করতেন না বরং নিজেই হাসতেন। আর এই সময়ে তিনি সবাইকে আরও হাসানর জন্য আজব আজব মুখভঙ্গি করতেন।
তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন, এবং বড় হয়ে একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন। তিনি কখনও এমন ভাবেননি যে তিনি একদিন সিনেমার হিরো হবেন বা কমেডিয়ান হবেন।
বড় হয়ে তিনি নিউ কাসেল ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন। আর এরপর তিনি বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টারস ড্রিগ্রিও কমপ্লিট করেন। আর এই কলেজে থাকাকালিনই তিনি বিভিন্ন নাটক বা থিয়েটারে অভিনয় করা শুরু করেন। আর এই সময়ে তিনি মাঝে মধ্যে বিভিন্ন নাটকের জন্য স্ক্রিপ্ট লেখাও শুরু করেন। এই কাজের মধ্যে তিনি এটা বুঝতে পারেন যে পড়াশোনা ছারাও তার মধ্যে আরও একটি জিনিসে মেধা আছে, তিনি যখন কোন নাটকের দৃশ্য লিখতেন তখন সেই দৃশ্যটি কেমন হবে, তাতে অভিনয় কেমন হবে, এই সব তিনি বাকিদের থেকে অনেক ভালো লিখতেন। এই ভাবে ধিরে ধিরে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। তিনি ভাবে যদি তিনিও অভিনয়ের জগতে আসেন তাহলে সফলতা পেতে পারেন। এই কারনে মিস্টার বিন কলেজের বিভিন্ন নাটক থিয়েটারে ভালো ভালো রল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার ছোটবেলা থেকেই কথা বলার সমস্যা ছিল, যে কারনে তাকে কোন ভালো রোল দেওয়া হত না।
তবে এখানে তিনি হার না মেনে বেশ কিছু টিভি শোতেও কাজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার কথা বলার সমস্যার জন্য তাকে অডিশনে বাদ দিয়ে দেওয়া হত। এভাবে চলতে থাকায় মিস্টার বিন বেশ হতাশ হয়ে পড়েন, তবে নিজের ট্যালেন্টের উপরে তার পুর বিশ্বাস ছিল।
তিনি এই সময়ে লক্ষ করেন তিনি যখন অভিনয় করেন সেই সময়ে তার কথা বলার সমস্যা হয় না। কিন্তু সাধারন ভাবে কারোর সাথে কথা বলতে গেলে তার সমস্যা হয়। এটা দেখে তার মনে কিছুটা আশা ফিরে আসে।
এবার মিস্টার বিন আবার বিভিন্ন শোতে অভিনয় করার জন্য অডিশন দিতে থাকেন, কিন্তু এবার তার সামনে আরেক বাধা আসে, মিস্টার বিন সেসময়ে একজন রোগা এবং খুবি সাধারন দেখতে ছিলেন, কিন্তু শোয়ের লোকেরা একজন হিরোর মত দেখতে অভিনেতা খুজছিলেন, তাই এবারও তাকে হারের সামনা করতে হয়।
এই সময়ে মিস্টার বিনের সামনে দুট রাস্তা ছিল, যেহেতু তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন তাই ভালো চাকরির অফার পেয়েছিলেন, আরেক দিকে ছিল তার অভিনয় জগতের কেরিয়ার, যার ভবিষ্যৎ কি হবে তা তিনি জানতেন না, কারন তখনও তিনি সফলতা পাননি।
এই যায়গায় কোন সাধারন মানুষ থাকলে চাকরির রাস্তাটিই বেছে নিত, কিন্তু রওয়ান অ্যাটকিন্সন কোন সাধারন মানুষ ছিলেন না, তার নিজের উপর ১০০ শতাংশ আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি সফল হবেনই।
এই সময়ে তিনি ঠিক করেন তার সব থেকে বড় বাধাকেই তিনি তার সব থেকে বড় হাতিয়ার বানাবেন। আর এই সময়ে তার অক্সফোর্ড কলেজে সিনেমার রাইটার রিচারড কারটেসের দেখা হয়, আর রওয়ান অ্যাটিকন্সন রিচারডের সাথে কথা বলে একটি কমেডি শো শুরু করার প্লানিং করেন। যেখানে অভিনয় এবং অংভঙ্গি দিয়েই তিনি মানুষকে হাসাবেন, এখানে তার কোন ডায়লগ থাকবে না। আর এখান থেকেই জন্ম হয় আমাদের সবার প্রিয় শো মিস্টার বিনের।
তবে আপনারা জানলে অবাক হবেন এই শোয়ের নাম শুরুতে মিস্টার হোয়াইট রাখা হবে বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু পড়ে মিস্টার বিন নামটিকেই বেছে নেওয়া হয়।
এরপর ১লা জানুয়ারি ১৯৯০ সালে মিস্টার বিনের প্রথম টিভি শো পাব্লিশ করা হয়। আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই শো সবার ফেভারিট হয়ে যায়। আর এই শোয়ের জন্যই মিস্টার বিন ইংল্যান্ডের নামকরা কমেডিয়ান হয়ে যান। একটি মজার বিষয় আপনাদের জানিয়ে রাখি এই শোয়ের জন্য মিস্টার বিনকে অনেকে এলিয়েন ভাবত, কারন শোয়ের শুরুটা দেখে মনে হয় মিস্টার বিন আকাশ থেকে এসে পড়েছে।
তবে এই শোয়ের পর মিস্টারবিন কে ঘুরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সিনেমায় তিনি কাজ করেন। এমনকি তিনি মিস্টার বিন চরিত্রটি নিয়ে দুট মুভিও বের করেন। এছাড়া তিনি ছোটবেলা থেকেই জেমস বন্ডকে পছন্দ করতেন, তাই তিনি চেয়েছিলেন কোন গোয়েন্দা সিনেমা বের করবেন, আর এরপরই আসে তার স্পাই কমেডি মুভি জনি ইংলিশ।
বন্ধুরা মিস্টার বিন শুধুমাত্র বড়দের কাছে ফেমাস এমন নয়, মিস্টার বিন নিয়ে একটি কার্টুন সিরিজও বের হয় ছোটদের জন্য।
এই মিস্টার বিন চরিত্রটির আজ প্রায় ৩০ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু আজও আমাদের কাছে সমান জনপ্রিয়।
বন্ধুরা মিস্টার বিনের জীবন আমাদের একটি বড় শিক্ষা দেয়। পরিস্থিতি যেমনই হোকনা কেন, যতই বাধা আসুক না কেন আমাদের থেমে থাকা উচিত না, বরং নিজের উপর বিশ্বাস রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। কেমন লাগল মিস্টার বিনের জীবনের এই ইতিহাস আমাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানান। প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক এবং শেয়ার করে দিন বন্ধুদের সাথে।
মিস্টারবিনের ইতিহাস নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন