আজ সারা বিশ্বে মহিলাদের অধিকার নিয়ে সব উন্নত রাষ্ট্র গুলো বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়, আর এই উন্নত রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডও একটি দেশ। কিন্তু আজ থেকে মাত্র ২০০ বছর আগেও এই ইংল্যান্ডে মহিলাদের সাথে একটি জঘন্য অপরাধ করা হত, যা শুনলে আপনারও ভীষণ খারাপ লাগবে, বন্ধুরা আজ থেকে ২০০ বছর আগে ইংল্যান্ডের পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের বাজারে গরু ছাগলের মত বিক্রি করে দিত। তাদের গলায় এবং কোমরে দড়ি বেধে নিয়ে আসা হত বাজারে, আর তারপর শুরু হত নিলামি, যে দিত সবচেয়ে বেশি দাম তার হাতে নিজের বিবাহ করা স্ত্রীকে তুলে দিত ইংরেজ পুরুষরা। অনেক সময় মাত্র ১ পাউন্ডেও বিক্রি হত মহিলারা, যার বর্তমান মুল্য ১ হাজার টাকা, আর এই বিষয়টি নিয়ে সেই সময়ে ইংল্যান্ডের আইন ব্যবস্থা তেমন কোন গুরুত্ব দিত না। আর সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল পুরুষরা নিজেদের স্ত্রি বিক্রি করলেও, অনেক সময় সেই স্ত্রি মানে যাকে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসা হয়, সেও নিজে থেকেই বিক্রি হতে চাইত। হ্যা বন্ধুরা, এমনই আজব ছিল ইংল্যান্ডের বউ বিক্রি প্রথা। এবার প্রশ্ন হল হঠাত করে ইংরেজ পুরুষরা কেন বউ বিক্রি শুরু করেছিল ? কেন ইংল্যান্ডের আইন ব্যবস্থা এই বিশয়ে গুরুত্ব দিত না, আর কেনই বা ওই বিক্রি হওয়া মহিলারাও মাঝে মধ্যে নিজেদের ইচ্ছাতেই বিক্রি হতেন ?
ইংল্যান্ডে স্ত্রী বিক্রির সর্ব প্রথম যে ঘটনাটি রেকর্ড করা হয়েছিল সেটি হয়েছিল ১৭৩৩ সালে। ইংল্যান্ডের বিলস্টন নামের একটি ছোট্ট গ্রামে স্যামুয়েল হোয়াইটহাউজ নামের এক ব্যক্তি তার স্ত্রী ম্যারি হোয়াইটহাউজকে, থমাস গ্রিফিথ নামের এক ব্যক্তির কাছে মাত্র এক পাউন্ডে বিক্রি করেন। সেই ১ পাউন্ডের বর্তমান মুল্য দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। তবে অনেকে মনে করেন এর অনেক আগে থেকেই ইংল্যান্ডে বউ বিক্রি শুরু হয়েছিল, কারন 1692 সালের নভেম্বরে জন নামের এক ব্যক্তি, তার স্ত্রীকে মিস্টার ব্রেসগার্ডলের কাছে বিক্রি করেছিলেন”, যদিও বিক্রির পদ্ধতিটি রেকর্ড করা হয়নি।তবে শুরুটা যেভাবেই হোক না কেন, বউ বিক্রি প্রথা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বউ বিক্রি করার আগে লোকাল খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিত ইংরেজ পুরুষরা, তাতে সেই মহিলার বিষয়ে এবং নুন্যতম মুল্যের কথা উল্লেখ করা থাকত, এরপর নির্দিষ্ট দিতে সেই মহিলাকে বাজারে নিয়ে আসা হত, তার গলায় দড়ি বেধে আবার অনেক সময় হাত বেধে বা কোমড় বেধে নিয়ে আসা হত বাজারে। এরপর শুরু হত নিলামের প্রক্রিয়া, যেখানে দাম শুরু হত নুন্যতম মুল্য দিয়ে, সব থেকে বেশি যে দাম দিত তার কাছে তুলে দেওয়া হত সেই মহিলাকে। এমনকি সেই মহিলার সাথে সাথে মহিলার সন্তানদেরও বিক্রি করা হত। সেক্ষেত্রে ওই একই ক্রেতা মহিলা ও তার সন্তানদের কিনে নিত।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রির দাম ১০ পাউন্ডের বেশি যেত না। তবে যদি সেই মহিলা অল্প বয়সি এবং সুন্দরী হতেন সেক্ষেত্রে দাম ১০০ – ২০০ পাউন্ডেও গিয়ে পৌঁছাত।
তবে এই নিলামের শেষে সেই মহিলার কাছ থেকে সম্মতি নেওয়া হত যে সে বিক্রি হতে চায় কিনা। 1824 সালে ম্যানচেস্টার সংবাদপত্রে বলা হয়েছে যে এক মহিলার দাম নিলামে প্রায় ৫ পাউন্ড উঠেছিল কিন্তু তার ক্রেতাকে পছন্দ হয়নি, এই কারনে তিনি সেই নিলামে সম্মতি দেননি, উল্টে তিনি ৫ পাউন্ডের কমে ৩ পাউন্ডে নিজের এক পছন্দের ব্যক্তির কাছে বিক্রি হয়েছিলেন। এছাড়াও অনেক সময় স্ত্রি নিজে থেকেই বিক্রি হতে চাইত, নিজের পছন্দের কোন ব্যক্তির কাছে। আবার অনেক সময় বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর সেই মহিলা নতুন স্বামির সাথে সুখে শান্তিতে থাকত। যেমন
1766, সাউথওয়ার্কের একজন কাঠমিস্ত্রি তার স্ত্রীকে বিক্রি করেছিলেন। তবে কিছু দিন পর লোকটি তার স্ত্রীকে ফিরে আসতে বলে, কিন্তু তার স্ত্রি নতুন সংসারে খুশি ছিল এই কারনে ফিরে আসতে অস্বিকার করে, শেষে ওই কাঠমিস্ত্রি আত্মহত্যা করে।
তবে সবসময় যে বাজারে নিলামের মাধ্যমেই বিক্রি হত এমন নয়, 1804 সালে একটি ঘটনা লন্ডনের একজন দোকানদার তার স্ত্রীকে তার অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বিছানায় দেখতে পান, তবে ঝগড়ার পর সেই অপরিচিত ব্যক্তিকে তার স্ত্রীকে কেনার প্রস্তাব দেন। সেই অপরিচিত ব্যক্তিও এতে সম্মতি জানায়, আর সেই মহিলাকে কিনে নেয়।
এবারত দেখে নেব বউ বিক্রি প্রথার আসল কারন কি ছিল ?
বর্তমানে আমাদের সমাজে বিবাহের চল যেমন রয়েছে তেমনি বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের চলও রয়েছে। স্বামী স্ত্রির মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকে তাহলে তারা কোর্টে ডিভোর্সের মামলা করে বিবাহের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে স্বামীকে তার স্ত্রিকে মাঝে মধ্যে ক্ষতিপুরন দিতে হয়। তবে সেটা ঠিক করে আদালত। আর এই ডিভোর্সের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি খুবই কম খরচে হয়ে যায়। ফলে ধনী বা গরীব সবাই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু আজ থেকে ২০০ বছর আগে ইংল্যান্ডে এই ডিভোর্সের প্রক্রিয়াটি ছিল খুবই জটিল। আর সেই সময়ে শুধুমাত্র ডিভোর্সের জন্য আবেদন করতেই প্রায় ৩০০ পাউন্ড খরচা হত, যার বর্তমান মুল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। এবার সেই সময়ে ইংল্যান্ডে গরীব বা মধ্যবিত্তরা এই বিপুল পরিমানের খরচা টানতে পারত না। ফলে ধিরে ধিরে তারা এই জঘন্য প্রথার শুরু করে। আর ইংল্যান্ডে যে বিবাহের আইন ছিল তাতে একজন বিবাহিত নারীর উপরে তার স্বামির পুরপুরি অধিকার ছিল। আর এই অধিকারকে হাতিয়ার করে বাজারে নিলামের মাধ্যমে ইংরেজ পুরুষরা নিজেদের স্ত্রীকে ত্যাগ করত। এবং তাকে অন্য কারোর কাছে বিক্রি করে সেই মহিলার ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করে দিত। তবে সেই নতুন মালিকের কাছে মহিলাটি কতটা সুরক্ষিত থাকত তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
শুরুর দিকে ইংরেজের আইনব্যবস্থা এই নিয়ে বিশেষ কোন গুরুত্ব দিত না। তবে একের পর এক বউ বিক্রির ঘটনা ইংল্যান্ডের ইমেজের জন্য খারাপ ছিল। এই কারনে ১৮৫৭ সালের দিকে ইংল্যান্ডে ডিভোর্সের প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে দেওয়া হয়, যাতে কেউ চাইলে সহজেই ডিভোর্স দিতে পারে। এতে ইংল্যান্ডে বউ বিক্রির ঘটনা অনেক কমে যায়। তবে একটা কাজ বহু দিন ধরে সমাজে চললে সেটা একপ্রকার রিতি হয়ে যায়। তাই ১৮৫৭ সালের পরেও বউ বিক্রির কিছু ঘটনা শোনা যেত।
সর্বশেষ যে বউ বিক্রির ঘটনাটি ঘটেছিল সেটা হয়েছিল ১৯১৩ সালে, যেখানে একজন মহিলা পুলিশে কমপ্লেইন করেছিলেন যে তার সন্তান এবং তাকে তার স্বামি অন্য এক পুরুশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
তবে বন্ধুরা সময়ের সাথে সাথে সমাজ থেকে এই জঘন্য প্রথা উঠে যায়। তবে এখান থেকে এটুকু আমরা সহজেই বলতে পারি, আমাদের ভারত মহিলাদের সম্মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। ভারতে নারীদের কোন ভোগ্য বস্তুর মত দেখা হয় না, এখানে নারীদের দেবি রুপে পুজা করা হয়, এমনকি প্রাচীন কালে ভারতীয় নারিরা সমাজের উচু উচু পদে ছিলেন।
তো বন্ধুরা কেমন লাগল ইংরেজদের এই ইতিহাস, আর আজকের আপনার জন্য রইল একটি সহজ প্রশ্ন, আচ্ছা বলুন ভারতে প্রথম মুসলিম মহিলা সুলতান কে ছিলেন ? প্রশ্নের উত্তর দিন এই ভিডিওর কমেন্ট বক্সে, ভিডিওটি থেকে যদি আপনি নতুন কিছু শিখে থাকেন তাহলে অবশ্যই লাইক করে শেয়ার করে দিন বন্ধুদের সাথে। আবার ফিরব ইতিহাসের কিছু রোমাঞ্চকর গল্প নিয়ে ততদিন ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।।